ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম পুলিশের হাতে আটক পাকিস্তানি নাগরিক, হতে পারে আইএসআইয়ের গুপ্তচরদফাই দফায় এন আই এর অভিযানের পরেও বন্ধ নেই বাঁকা পথে ভারতে প্রবেশ করার কর্মকাণ্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্তকে ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবেশ করছে ভারত ভূখণ্ডে। আবারও তার প্রমাণ মিললো বৃহস্পতিবার। সাব্রুম থানার পুলিশ আটক করে আয়ান আলম ওরফে আল আমিন নামের এক পঁচিশ বর্ষীয় যুবককে। যার জন্মস্থান পাকিস্তানের করাচি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় সাব্রুমের জলেফা এলাকায়। সাথে সাথে তাকে এলাকাবাসী আটক করে খবর দেয় সাব্রুম থানার পুলিশকে।পুলিশ আয়ানকে আটক করে নিয়ে আসে সাব্রুম থানায়।সাথে সাথে শুরু হয় সাব্রুমের বিভিন্ন গোয়েন্দা দপ্তরের টানা প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টার জেরা। জেরায় আয়ান জানায় তার জন্ম পাকিস্তানে,তার বাবার বাড়ি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মায়াপুরে। বিগত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে ভারতের উপর দিয়ে অবৈধভাবে পাকিস্তানে চলে যায় তার বাবা মা। পাকিস্তানের করাচিতে জন্ম হয় আয়ানের। পুনরায় অবৈধভাবে ২০১১ সালে আইয়ানকে নিয়ে তার বাবা চলে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু তার মা সহ তার আরও চার ভাই এবং চার বোন থেকে যায় পাকিস্তানে। কিছুদিন বাংলাদেশে থাকার পর পুনরায় বন্ধু-বান্ধবসহ আয়ান বাঁকা পথে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং দক্ষিণ ভারতের কেরালাতে গিয়ে অবৈধ ভারতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে সেখানে কাজ করতে থাকে। এরপর চলে আসে দিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে। সেখানে যুক্ত হয়ে যায় ভাঙ্গার ব্যবসার সাথে। দীর্ঘদিন দিল্লি থাকার পর চলতি বছরের ২০ শে ফেব্রুয়ারি আয়ান কাশ্মীর চলে যায় অবৈধভাবে পাকিস্তানে যাওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। তাকে ফিরে আসতে হয় পুনরায় দিল্লিতে। দিল্লি স্টেশনে নামতেই ১৫ই মার্চ ২০২৪ ইংরেজি দিল্লি স্পেশাল ব্রাঞ্চ স্টেশনেই আটক করে আয়ানকে। এক মাস টানা জেরার পর ১৫ ই এপ্রিল ২০২৪ ইংরেজি আয়ান কে নাকি ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। দিল্লি থেকেই আয়ান সংগ্রহ করে আগরতলা এবং বাংলাদেশের দালালদের নম্বার, কথা বলে তাদের সাথে। এরপর ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেস ধরে চলে আসে আগরতলায়। আগরতলা থেকে দশটার ট্রেনে আয়ান পাড়ি দেয় সাব্রুমের উদ্দেশ্যে। দালালদের সাথে পুনরায় কথা বললে আয়ানকে তারা মনুবাজার স্টেশনে যেতে বলে। মনুবাজার যাওয়ার পথেই জলেফা আটকা পড়ে সে। সাব্রুম থানার পুলিশ জানায় তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় মোবাইল ভারতীয় আধার কার্ড সহ বিভিন্ন কাগজপত্র। সাব্রুম মহকুমা পুলিশ প্রশাসক নিত্যানন্দ সরকার জানায় তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রজু করে আগামীকাল পুলিশি রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে সোপার্দ করা হবে।কিন্তু জনমনে প্রশ্ন এই আয়ান isi – এর চর নয় তো? সাব্রুম সহ গোটা রাজ্যের সিংহভাগ এলাকা বেষ্টিত কাঁটাতারের বন্ধনে। রয়েছে বিএসএফের করা প্রহরা।এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন সড়ক পথগুলিতে রয়েছে পুলিশের নাকা চেকিং সহ করা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু এত কিছুকে ডিঙ্গিয়ে প্রতিদিন রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত জায়গায় দিয়ে অবাধে চলছে ইল্লিগেল মাইগ্রেশন। কোনভাবেই যেন এর ইতি টানা যাচ্ছে না। একবার ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করা গেলে তবেই সেরে গেল। দু থেকে আড়াই হাজার টাকায় হয়ে যাচ্ছে বৈধ পরিচয় পত্র। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্টি দেখিয়ে দেশি-বিদেশি দালালরা দেদার চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ ব্যবসা। চোর-পুলিশের এই খেলা আজ যেন নিত্য দিনের নামচা।তবে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে সাব্রুমের মত জায়গা-যেখানে আগামী দিন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বার সেখানে পাকিস্তানি নাগরিকের আটক হওয়া ব্যাপকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে গোটা এলাকার জনগণকে।