এবার থেকে বিক্রি হবে সূর্যের আলো, তাও আবার রাতের বেলায়। ধরুন রাতের বেলা আপনার ইচ্ছে হল সূর্যের আলো দেখার, কী করবেন? খুব সহজ মোবাইল বের করে নির্দিষ্ট একটি অ্যাপ খুলে আপনাকে সূর্যের আলো অর্ডার দিতে হবে, তারপর আপনার লোকেশন দিতে হবে এরপর নির্ধারিত মূল্য দিয়ে দিলেই কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার উল্লেখ করা ঠিকানায় সূর্য রশ্মি এসে পড়বে। শুনে অবাক হলেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন নিশ্চয়ই কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প তাই তো? অবশ্যই এটা ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। আর কিছুদিনের মধ্যে সত্যি সত্যি রাতের বেলা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে সূর্য রশ্মি কেনা যাবে। পরিস্কার হল না ব্যাপারটা তাই না? আসুন তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পুরো ঘটনাটা বিস্তারে আলোচনা করি। রিফ্লেক্টর অর্বিটাল আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এই সংস্থা শুরু করতে চলেছে নতুন এক ব্যবসা যা নিয়ে সরগরম এখন গোটা বিশ্ব। কিন্তু কীভাবে এই সংস্থা সূর্যের আলো বিক্রি করবে? প্রথমেই উন্নত সংস্থা কিছু কৃত্রিম স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সূর্যরশ্মিকে বন্দি করবে, তার পর সেই সূর্যরশ্মি প্রতিফলনের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠাবে আর এই ভাবেই রাতের বেলাতেও মানুষ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সূর্য রশ্মি পেয়ে যাবেন ঘরে বসেই, উপায় তা শুনতে যতটা সহজ মনে হলেও আদতে কিন্তু ততটা সহজ নয়৷ রিফ্লেক্টর অর্বিটাল নামক এই সংস্থা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ২৭ টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। আর এই প্রত্যেকটা স্যাটেলাইটে একটি করে মাইলার মিরর বা আয়না লাগানো থাকবে। এই আয়নাগুলো আকার বর্গক্ষেত্রের মতো যার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ উভয়ই ৩৩ ফুট। মাইলার হল এক ধরনের প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস যখন কোন মহাকাশচারী মহাকাশে পাড়ি দেন তখন কম্বল, ইনসুলেটর এবং প্যাকেজিং এর কাজের জন্য এই মাইলার নামক জিনিসটি ব্যবহার করা হয়। এই মাইলার মিররগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সূক্ষ্ম রশ্মিতে সূর্যের আলোকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত করা যায় আর তার পর সেই সূর্য সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হবে যে এই রশ্মি অর্ডার করেছিলেন তার কাছে। এখানে মাপজোকের ব্যাপারে একদম নির্ভুল থাকা ভীষণ প্রয়োজন। এত মাপজোকের প্রধান কারণ হল, ধরুন আপনি রাতের বেলার সূর্য রশ্মি অর্ডার দিলেন, কিন্তু আলোকিত হল আপনার পাশের বাড়ি, যাতে এমন ধরনের সমস্যা না ঘটে তাই বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পুরো ঘটনাটা ঝালাই করে দেখে নিচ্ছে রিফ্লেক্ট অর্বিটাল নামে একটি সংস্থা। রিফ্লেক্ট অর্বিটাল সংস্থার সিইও হলেন বেন নোয়াক গত এপ্রিল মাসে আমেরিকা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে তিনি জানান, তাদের ওয়েবসাইটে লগইন করে কেউ তাঁর জিপিএস লোকেশন জানালেই রাত নামার পর সেই লোকেশনে সূর্যের আলো পৌঁছে দেবে রিফ্লেক্স অর্বিটাল । ২০২৫ সাল থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে, ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০ হাজার মানুষ রিফ্লেক্ট অর্বিটালের ওয়েবসাইটে রাতের বেলার সূর্য রশ্মি কেনার জন্য উৎসাহ দেখিয়েছেন। তবে সংস্থার তরফ থেকে এখনও কোনও মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ভাবতে পারছেন আপনি রাতের অন্ধকারে চুপ করে বসে রয়েছেন অমনি একটা ফালি রোদ এসে আপনার গায়ে এসে পড়লো আপনার দুঃখ কষ্ট একাকীত্ব এক নিমেষে উবে যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাতের অন্ধকারে বসে আপনি স্পষ্টভাবে এই আলোর সন্ধান পাবেন, যা আপনার ঠোঁটে হাসি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট। ব্যুরো রিপোর্ট নিউজ অবিকল।