ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার জুমিয়াদের ভাগ্যের চাকা একই জায়গায় স্থিমিত। তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। তাদের ক্ষেত্রে কেন এমনটা? বছরের পর বছর ধরে উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে বসে জুমের ফসল কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ ফুল ঝাড়ু বিক্রি করতে হয়। ওইসব জুমিয়াদের জন্য প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে বর্তমানেও শেড ঘর নির্মাণ করা হয়নি তাদের সামগ্রী এনে বসে বিক্রি করার জন্য। ওইসব বিষয়গুলি জুমিয়াদের মনে কুড়েঁ কুড়েঁ খাচ্ছে। যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা উপজাতি দরদী স্লোগান এবং উন্নয়নের ডালিকে সামনে রেখে লম্বা চওড়া ভাষণ দেয়। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কতটা উন্নয়ন হয়েছে ঐ সকল এলাকায় পরিদর্শনে না গেলে বোঝা কষ্ঠকর! তাদের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দলই খবরাখবর রাখে না। কথা হচ্ছিল জনৈক জুমিয়া অর্থাৎ আঠারোমুড়া পাহাড়ের বুক চিরে আসাম আগরতলা জাতীয় সড়কের পাশে বসে জুমিয়ারা ফুল ঝাড়ু বিক্রিকে কেন্দ্র করে। তারা প্রতিটি ফুল ঝাড়ু ১৮-২০ টাকা ধরে বিক্রি করছে। পাহাড়ের জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা গুলোতে পূর্বের মতো ফুল ঝাড়ু আর সেই রকম পাওয়া যায় না। প্রত্যন্ত এলাকার জুমিয়ারা বহু দূর দুরান্ত থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করতে হয়। এর কারণেই ফুল ঝাড়ু বর্তমানে বাজার গুলিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। আরো জানা গেছে, মূলত ফাল্গুন চৈত্র মাস এই দুটি মাস জুমিয়া পরিবার গুলির মধ্যে সংসারের ভরণপোষণে খুবই সংকট দেখা দেয়। এই সংকট মোচনের জন্য ফাল্গুন এবং চৈত্র এই দুটি মাসে জঙ্গল থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করে তারা। আর সেই উপার্জনের অর্থ দিয়ে তাদের সংসারের ভরণপোষণের সংকট মোচন করে। এদিকে একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামি আর ডি ব্লকের অধীন তুই কর্মা এডিসি ভিলেজের বিলাইহাম রিয়াং চৌধুরী পাড়া সহ তীর্থ মনি পাড়ায়। বর্তমানে এই দুইটি এলাকায় প্রায় দের শতাধিক পরিবারের বসবাস প্রত্যেকটি পরিবারই জুম চাষ কিংবা বনের লতাপাতা বিক্রি করে সংসারের ভরণপোষণ করে আসছে বহু কাল ধরে। ওই সকল এলাকার বসবাসকারী রিয়াং সম্প্রদায়ের লোকেদের আয় উপার্জনের একমাত্র পথ ঝুম চাষ। ঝুম চাষ ভালো হলে তাদের সংসার প্রতিপালনে কষ্ট হয় না। আর যখন জুম চাষ একেবারেই তুলনামূলক খারাপ হয় তবে তাদের দুঃখের অন্ত থাকে না। সংসারের ভরণপোষণ যোগা তে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বলাবাহুল্য বিগত বছর জুম চাষ তেমন আশানুরূপ হয়নি তাদের। ফলে খুবই দুঃখ দুর্দশা মধ্য দিয়ে পালন করতে হয়েছে তাদের সংসার। বিগত বছর জুম চাষ ভালো হয়নি বলে এ বছর সংসারের ভরণপোষণ যোগা তে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে একাংশ জুমিয়া পরিবারগুলি। জঙ্গলের লতাপাতা বিক্রির পাশাপাশি জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা ফুল ঝাড় ু বিক্রি করে পরিবারের ভরণপোষণ যোগানোর ব্যবস্থা ইতিমধ্যে লেগে পড়েছে ওই এলাকায় বসবাসকারী জুমিয়া পরিবার গুলি। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গলে তেমন ফুল ঝাড়ু পাওয়া যায় না আগের মত। ফলে জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে হচ্ছে ফুল ঝাড়ু। এক জুমিয়া পরিবারের সদস্য জানান, বিগত বছর জুম চাষ সেরকম ভালো হয়নি। ফলে সংসদের ভরণপোষণ যোগাতে গিয়ে খুবই কষ্টসাধ্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে এবছর জুম চাষ ভালো না হলেও বিকল্প ব্যবস্থা ফুল ঝাড়ু বিক্রি।প্রতি মুটা ফুল ঝাড়ু বিক্রি করা হচ্ছে ১৮ থেকে কুড়ি টাক। সে সরকার জুমিয়াদের সমস্যাগুলি দূরীকরণে কতটুকু সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। নাকি তাদের দুঃখ দুর্দশায় দেখে ও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করবে।