বয়স ৭৩ কিন্তু চালাতে পারেন জেসিবি থেকে ক্রেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, মোট ১১ টি ভিন্ন ভিন্ন গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে আমাদের দেশের এই বয়স্ক মহিলাটির কাছে। বাস, ট্রাক, লরি, ট্রেক্টার, অটো কিংবা যেকোনও ফোর হুইলার হোক না কেন বয়স্ক মাহিলাটির কাছে এসব চালানো বাঁ হাতের খেল। কি অবাক লাগছে তা শুনে? রাধারাণী ওরফে মানি আম্মা চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু একবার গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত দিলে আপনি বুঝতেও পারবেন না একজন সত্তর ঊর্ধ্বে মানুষ এত ভাল গাড়ি চালাতে পারেন। আর হবেই নাই বা কেন বলুন? সেই ৩০ বছর বয়স থেকে গাড়ি চালাচ্ছেন কেরালার এই মানি আম্মা। আজ নিজের হাতে একটা গোটা ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট চালান তিনি। শুধু তাই নয়, মানি আম্মার কাছে যে সব গাড়ি চালানোর লাইসেন্স রয়েছে, আমাদের দেশের অনেক পুরুষ মানুষের কাছে সেটা নেই । আসুন আজ আপনাদেরকে এমন একজন মহিলার গল্প বলি, যিনি বয়সের তোয়াক্কা না করে জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে হয়ে উঠেছেন গোটা দেশের গর্ব। কথায় আছে, ভালোবেসে কোনও কাজ করলে সেই কাজে সাফল্য নিশ্চিত। আর তাই ৭৩ বছরের এই মানুষটা গোটা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম। কেননা মানি আম্মার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল গাড়ি চালানোর। কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল তাঁর বিয়ের পর। কারণ ছোটবেলা থেকেই মানি আম্মাকে শুনতে হয়েছিল গাড়ি চালানো শুধুমাত্র ছেলেদের কাজ। একজন মহিলা কখনওই একজন পুরুষের থেকে ভাল গাড়ি চালাতে পারবে না। কিন্তু মানি আম্মার জেদ চেপে গিয়েছিল, গাড়ি একদিন তিনি চালাবেনই। তাই বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরেই প্রথম গাড়ি স্টিয়ারিংয়ে হাত দেন তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালে একটি ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পান তিনি। শুনলে অবাক হবেন মানি আম্মা যেসময় ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পেয়েছিলেন, সেই সময় কেরালায় ভারী গাড়ির লাইসেন্স পাওয়া এতটা সহজ ছিল না। কিন্তু মানি আম্মা নিজের দক্ষতার সঙ্গে পেয়েছিলেন সেই লাইসেন্স। এবং লাইসেন্স পাওয়ার পরেই ড্রাইভিং আগ্রহী ব্যক্তিদেরও তিনি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন। এরপর মানি আম্মা এবং তাঁর স্বামী মিলে কেরালার কোচিতে খুলেছিলেন একটি ভারী যানবাহনের ড্রাইভিং স্কুল। যা কেরালার বুকে প্রথম ভারী যানবাহনের ড্রাইভিং স্কুল নামে আজও পরিচিত। যেখানে তার স্বামী এবং স্ত্রী দুজনে মিলে দক্ষতার সঙ্গে সবাইকে ড্রাইভিং শেখাতেন। কিন্তু ২০০৪ সালে মানি আম্মার স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় সবটা ওলট-পালট করে দেয়। স্বামীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন মানি আম্মা, কিন্তু তারপর আবারও ঘুরে দাঁড়ান তিনি। মনের জোর আর কঠোর পরিশ্রমকে সঙ্গী করে তাঁদের এ টু জেড ড্রাইভিং
সব ধরনের গাড়ি চালাতে পারেন এই বয়স্ক মহিলা ! মহিলার কাছে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স।
স্কুলকে তিনি পরিণত করেন এ টু জেড ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে। আসলে শিক্ষার কোনও বয়স নেই। আর সেটাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন এই বয়স্ক মহিলাটি । ড্রাইভিং শেখানোর পাশাপাশি এই বয়সে এসে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিপ্লোমা করেছেন তিনি। ভাবতে পারছেন মানুষের লড়াই! যে বয়সে একটা মানুষ রিটায়াড করে বিশ্রাম নেন, সেই বয়সে মানি আম্মা একের পর এক গাড়ি চালিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। আসলে আমাদের বয়সটা শুধুমাত্র একটা সংখ্যা। তাই ইচ্ছে এবং পরিশ্রম জারি থাকলে সব সম্ভব। মনে রাখবেন, আজ হয়নি বলে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিলে কিন্তু হবে না। আজ হয়নি তো কী হয়েছে? কাল কিংবা পরশু নিশ্চয়ই হবে৷ আর তার জন্য হাল ছাড়ে দিলে চলবেনা ।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট নিউজ অবিকল।