হার্ট নিয়ে গবেষণা করতে আমেরিকা গেছিলেন ভারতের এই ডাক্তার। কিন্তু ফিরে এলেন মুণ্ডিত মস্তক গেরুয়াধারী একজন সন্ন্যাসীর বেশে, আজ্ঞে হ্যাঁ । চিকিৎসক দেবতোষ চক্রবর্তী থেকে হয়ে উঠলেন রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ। এই মুহূর্তে যে মানুষটা বেলুড় মঠের আরোগ্য ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই মানুষটির জীবনে শুনতে শুনতে আপনার মনে পড়ে যাবে আমির খান অভিনীত থ্রি ইডিয়টস সিনেমার সেই রেইঞ্চ কে। এই মানুষটার আসল নাম ডক্টর দেবতোষ চক্রবর্তী। একের পর এক আশ্চর্যজনক রেজাল্ট এর পরে হয়তো তিনি হতে পারতেন দেশের সব থেকে বড় কার্ডিওলজিস্ট কিংবা কোনও গবেষক, অধ্যা
খেলোয়াড় অথবা বিখ্যাত কোন সঙ্গীত শিল্পী। দেবতোষ মহারাজ চাইলেই হয়তো তাঁর মেধা এবং প্রতিভা দিয়ে এ রকমই কোনও একটা পেশা বেছে নিয়ে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে একটা বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু না তিনি তা করেননি। বরং এই সবকিছুর মায়া, লোভ ত্যাগ করে তিনি বেছে নিয়েছেন ত্যাগের পথ, সেবার পথ। কিন্তু কেন একজন মেধাবী মানুষ এ ভাবে বদলে গেলেন? কেনই বা তিনি রিসার্চ করতে গিয়ে আচমকা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন? আসুন আজ আপনাদেরকে কলকাতার এমন এক মহামানবের গল্প বলি যিনি স্বামী বিবেকানন্দের সেই বাণীকেই সত্যি করে দেখিয়েছেন। “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, সব সময় অন্যের কল্যাণ করার চেষ্টা করো। দেখবে সৃষ্টিকর্তা নিজে থেকেই তোমার কল্যাণ করছেন। আর তাই রামকৃষ্ণ মিশনের এই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তাঁর গোটা জীবনটাই উৎসর্গ করেছেন মনুষ্য সেবার উদ্দেশ্যে । ১৯৮৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিলেন দেবতোষ মহারাজ। এরপর উচ্চমাধ্যমিকেও সপ্তম হয়ে নজির গড়েছিলেন তিনি। তার পর জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষায় মেডিক্যালে তাঁর এক হয়েছিল ১৭ একের পর এক দুর্দান্ত রেজাল্ট করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে৷ সেখানে এসেও খুব ভাল রেজাল্ট করে তিনি চলে গিয়েছেন দিল্লি। সেখানে এইমস থেকে এমডি হয়ে হার্ট নিয়ে গবেষণা করতে পাড়ি দেন আমেরিকা। দেবতোষ মহারাজের বাবা ছিলেন রাইটার্সের উচ্চপদস্থ অফিসার এবং তাঁর মা ছিলেন সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা৷ বন্দি এবং বিত্তশালী পরিবারের ছেলে হয়েও তার চলনে বলনে বিত্ত প্রদর্শন বা অহং এর লেশমাত্র ছিল না। বরং ছোটবেলা থেকে প্রতিভাবান ছিলেন দেবতোষ মহারাজ। তাঁর গলায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনলে আপনিও মুগ্ধ হতে বাধ্য। এছাড়াও আঁকা ব্যাডমিন্টন, ধর্মীয় বক্তৃতা, আবৃত্তি ও নাটক সবকিছুতেই তাঁর জুড়ি মেলা ভার। মার্কিন মুলুকে গিয়ে হার্ট নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পরে হঠাৎ করে তিনি সম্পূর্ণ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক যেমন থ্রি ইডিয়টস সিনেমায় ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর রেইঞ্চ কে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। একেবারে যোগাযোগবিহীন হয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল সে ৷ এ
হার্ট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গেরুয়াধারি সন্ন্যাসীর বেশে দেশে ফিরলেন এক গবেষক !
যেন ঠিক তাই। এর কয়েক বছর পর হঠাৎ করে দেবতোষ মহারাজকে দেখা যায় গেরুয়া সন্ন্যাসীর বেশে বেলুড় মঠে। একজন ডাক্তার মানুষের এই ভোলবদল দেখে সবাই চমকে গিয়েছিলেন। তখন অবশ্য জাগতিক চাওয়া পাওয়ার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে পৌঁছে গেছেন তিনি। ডাক্তারি ছেড়ে নিয়েছেন সন্ন্যাস। সেদিন অবশ্য সবাই বুঝতে পেরেছিল, কেন দেবদাস মহারাজ আমেরিকা থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার সময়ে এই মহামানবই সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে গেরুয়া বসনে হাতে তুলে নিয়েছিলেন স্টেথোস্কোপ। তবে পেশা হিসেবে নয়, সাধারণ মানুষের বিপদে বারংবার এগিয়ে গেছেন তিনি। আসলে মনুষ্য সেবার থেকে বড় সেবা এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। কারণ প্রতিটা প্রাণের মধ্যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা বাস। স্বামীজি আমাদের বারংবার সেই মনুষ্য সেবার কথাই বলেছেন৷ আর তাই দেবতোষ মহারাজও স্বামীজির সেই দেখানো পথকেই অনুসরণ করছেন।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট নিউজ অবিকল