শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন এই মহিলা। একটা সময়ে স্বামীর মারের ভয়ে বাথরুমে লুকিয়ে থাকতেন তিনি। আর আজ সেই মহিলার ভয়ে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খায়। আইএএস অফিসার সবিতা প্রধান গড়। মধ্যপ্রদেশের মান্ডলা জেলার আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সবিতা দেবী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর, গরিব পরিবার। তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চিন্তা ছিল পরিবারের। তবে বিয়ের পর সবিতাদেবীর ভরপেট খাওয়ার না জুটলেও স্বামীর হাতে মার জুটত নিয়মিত। আর আজ সেই মহিলার গোটা দেশের কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম । আসুন আজ শুনে নিই এমন এক নারী শক্তির গল্প যার নিজের জেদ আর পরিশ্রম তাঁকে খুব সাধারণ গৃহবধূ থেকে বাড়িয়ে তুলেছে একজন সফল আইএএস অফিসার।
শশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য না করতে পারা মহিলা আজ আইপিএস আধিকারিক। অনুপ্রেরণার আরেক নাম তিনি।
গরিব আদিবাসী পরিবারের মেয়ে হওয়ার দরুন লড়াইটা সবিতাদেবী রক্তে। তাই ছোটবেলা থেকেই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে নিজের ইচ্ছেগুলো সঙ্গে আপস করে বড় হয়েছেন তিনি। তবুও শত অভাবেও নিজের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেননি সবিতাদেবী, স্বপ্ন দেখেছিলেন ডাক্তার হওয়ার দু টাকা বাঁচানোর জন্য বাড়ি থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে পায়ে হেঁটে পড়তে যেতেন তিনি। সবিতাদেবী তাঁর গ্রামের প্রথম মেয়ে তিনি মাধ্যমিক পাশ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সুখ চিরস্থায়ী নয় তাই খুব অল্প বয়সেই বইখাতা ফেলে ধরতে হয়েছিল হাতা-খুন্তি। সবিতাদেবী তখনও বুঝতে পারেননি আগামী দিনে তার জন্য ঠিক কী অপেক্ষা করছে। তাই নতুন বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই শ্বশুরবাড়ি আসল রূপ বেরিয়ে পড়েছিল তাঁর সামনে। এরপরেই শুরু হয় সবিতাদেবীর উপর অকথ্য অত্যাচার। শ্বশুর শাশুড়ির মতে, অত্যাচার এতটাই বাড়ে যে তাঁকে দিনের পর দিন খেতে দেওয়া হত না। সবিতাদেবী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেও সবিতাদেবীকে দিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করানো হত। বাথরুম পরিষ্কার, রান্নাবান্না, শ্বশুরের পায় তেল মালিশ সবটাই একা হাতে করতেন সবিতাদেবী। আর এভাবে অত্যাচারিত হতে হতে পরপর দুটি সন্তানের জন্ম দেন সবিতাদেবী। সবিতাদেবীর কথায় এত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম আমার শ্বাশুড়ি সেই ঘটনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কিন্তু বাধা দিতে আসেননি। আর তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি মরে গেলে ওদের কিছু ক্ষতি হবে না, বরং আমার সন্তানের ক্ষতি হবে। আর একজন মা হিসেবে আমি সেটা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। তারপরই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। এরপর নিজের সন্তানকে অত্যাচারিত হতে দেখে গর্জে ওঠেন সবিতাদেবী। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাঁর তাই ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।সবিতাদেবীর হাতে দুই সন্তানকে নিয়ে মাত্র সাতশ টাকা হাতে করে শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। ভাড়াবাড়িতে থেকে শুরু করেন বিউটি পার্লারে কাজ আর তাঁর সঙ্গে টিউশন পড়ানো, একই সঙ্গে শুরু করেন নিজের পড়াশোনা ও মনের জোরে প্রথমবারের চেষ্টাতেই স্নাতক হন তিনি। তারপর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। আর তার পরেই ঠিক করেন ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসবেন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সবিতাদেবীকে। প্রথম বারের প্রচেষ্টাতেই ইউপিএসসি ক্র্যাক করেন তিনি এবং মাত্র ২৪ বছর বয়সে চিফ মিউনিসিপ্যাল অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন। তারপরে ডিভোর্স ফাইল করেন
শশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য না করতে পারা মহিলা আজ আইপিএস আধিকারিক। অনুপ্রেরণার আরেক নাম তিনি।
সবিতাদেবী। বর্তমানে সবিতাদেবী মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র ডিভিশনের জয়েন্ট ডিরেক্টর পদে কর্মরত তাঁর দুই সন্তান এখন কলেজে পড়াশোনা করেছে। আবারও নতুন করে নতুন মানুষের সঙ্গে জীবন শুরু করেছেন সবিতাদেবী।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট নিউজ অবিকল।