জানেন কী ট্রেনে আপনি যে মল মূত্র ত্যাগ করেন সেই মল মূত্র আসলে কোথায় যায়? ভাবছেন রেল লাইনে পড়ে যায় ? না কয়েক বছর থেকে বদলে গেছে এই নিয়ম। কোথায় নিয়ে জমা করা হয় ট্রেনের যাত্রিদের মল মূত্র? ভারতীয় রেল এনেছে এক দারুণ সিস্টেম জানলে আপনি ও চমকে উঠবেন। ট্রেনের ইঞ্জিনে তো টয়লেট থাকে না। জানেন টয়লেট বা পটি পেলে ট্রেনের লোকো পাইলটরা কী করেন? শুনলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেবেন আপনি ও। ট্রেনের ভিতরের কিছু অবাক করা তথ্য যা জানলে রীতিমতো অবাক হতে বাধ্য হবেন আপনি। জানুন,আপনারা অনেকেই দুর পাল্লার ট্রেনে যাত্রা করেছেন সেই সময় নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে বাথরুমের নীচে খোলা থাকে।ফলে যাত্রীরা ট্রেনে মল মূত্র ত্যাগ করলে লাইনে পড়ে যায়। কিন্ত এতে রেলের অনেকটা ক্ষতি হচ্ছিল পরিবেশের জন্য ও অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল।এ কারণে রেল অন্য এক ব্যবস্থা চালু করেছে, খোলা জায়গায় মল মূত্র ত্যাগ পরিবেশের জন্য কখনই ভালো নয়। তাই এই ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয়েছে পরিবেশের কথা চিন্তা করে। কিন্ত তার পরেও রেল ট্রেকের উপরে মল পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য ভারতীয় রেল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক কী সেই নতুন ব্যবস্থা? ভারতীয় রেলে বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মল মূত্র রেল লাইনেই পড়তো যার ফলস্বরূপ লাইনে মরচে ধরে যেতো খুব দ্রুত।পরে একটি নিয়ম করা হয়, বাথরুমে একটি সেনসার থাকবে যার ফলে ট্রেনের গতি ত্রিশ কিলোমিটারের বেশি হবে। সেনসারের মাধ্যমে জমে থাকবে ও বর্জ্য লাইনে পড়বে না। এতে স্টেশনের সামনে বর্জ্য না পড়ে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়বে। যাতে কোন রকম দৃশ্য দূষণ না হয় এবং দুর্গন্ধ না ছড়ায় কিন্ত তাতেও বিপত্তির কারণ। যাই হোক না কেনো এই বর্জ্য পদার্থ রেল লাইনে পড়ছে তাতে দ্রুত মরচে পড়ে যাচ্ছে ফলে শেষমেশ রেল কর্তৃপক্ষ কে এই ব্যবস্থা বাতিল করতে হয়। তারপর ২০১৩ সালে বায়ো টয়লেটের ব্যবহার শুরু হয়। এই ব্যবস্থায় বাথরুমের নীচে একটা চেম্বার করা হয় এবং যাতে এক ধরনের ব্যাকটোরিয়া থাকে না এবং বর্জ্য পদার্থ গুলোকে ডিকম্পজিং করে। প্রসঙ্গত এই ধরনের ব্যাক্টোরিয়া গুলো আমাদের বাড়ির সেপটিক টেঙ্কে ও থাকে তবে নির্দিষ্ট চেম্বারে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের অন্তর পরিষ্কার করা হয়। এই ব্যবস্থার ফলে খুব সহজেই রেল লাইনে মল মূত্র আর পড়বে না এবং কোনো রকমের দৃশ্য দূষণ দুর্গন্ধ বা লাইনের ক্ষতি হয় না। অন্যদিকে দুর পাল্লার যাত্রীদের সফর অনেকটাই লম্বা থাকে। তাই দীর্ঘক্ষণ যাত্রায় যাত্রীরা অনেক সময় ট্রেনের মধ্যে শৌচাগার ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ট্রেন চালাতে চালাতে ট্রেন মাঝ পথে থামানো যায় না। তাছাড়া ইঞ্জিনের কাছেও কোন বাথরুম থাকে না। তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে অর্থাৎ শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে কী করেন লোকো পাইলটরা। আসলে যখনই স্টেশনে কোন ট্রেন রওয়ানা দেয় তখন আগে ভাঘেই লোকো পাইলটরা শৌচ কর্ম সেরে নেন। যার ফলস্বরূপ দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য তাদের আর শৌচাগার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। আগে থেকেই লোকো পাইলটদের কাছে সমস্ত নির্দেশ চলে যায়। যার দরুন ট্রেন চলাচলে ও কোন সমস্য হয় না। তাছাড়া অনেক সময়ই কোন স্টেশনে ট্রেন থামলে লোকো পাইলটরা শৌচ কর্ম সেরে নেয়। কিন্ত ট্রেন চলাকালীন একান্ত শৌচ কর্ম করার প্রয়োজন হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই লোকো পাইলটরা বিষয়টি কন্ট্রোল রুমে জানান। সেখান থেকে পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এই ভাবে অনুমতি নিয়ে পরবর্তী স্টেশনে নেমে শৌচাগার ব্যবহার করেন লোকো পাইলটরা। তবে একথা ঠিক এমন পরিস্থিতি সচরাচর আসে না। তাছাড়া এমনিতেই ও এক থেকে দুঘন্টা অন্তর অন্তর একটা স্টেশনে চলে আসে। তাই নেমে চালক লোকো পাইলটের শৌচ কর্ম সারতে কোন অসুবিধা হয় না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো রাজধানী এবং বন্দে ভারতের মতো ট্রেন গুলো।এই ট্রেন গুলি দীর্ঘ সময় ধরে চলাচল করে এবং খুব কম স্টেশনে থামে। তাই ট্রেনে দীর্ঘ পথ অতিক্রম কারী ট্রেন গুলিতে সত্যিই সমস্যায় পড়েন চালকরা। তাছাড়া রাজধানী বা বন্দে ভারত ট্রেন গুলো ছুটে চলে রাতভর তবে এক্ষেত্রে কন্ট্রোল রুমের অনুমতি নেওয়ার ব্যাবস্থা রয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেন গুলি কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগের পরই অনুমতি নিয়ে ট্রেকে কিছুক্ষণ ট্রেন থামিয়ে নিজের শৌচকর্ম সারতে পারেন চালকরা।কন্ট্রোল রুম থেকে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত ট্রেন থামানো যায় না।একমাত্র গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া গেলে তবেই ট্রেন থামানো সম্ভব। নিউজ ডেস্ক রিপোর্ট।