জানেন হাওড়া ব্রিজ প্রতিদিন দুপুর আর রাত ১২ টায় কেন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়? সবাই জানে যে হাওড়া ব্রিজ তৈরির অবদান একমাত্র ব্রিটিশদের। কিন্তু জানেন কি? যদি টাটারা না থাকত তাহলে হাওড়া ব্রিজ কোনদিন তৈরিই হতো না। না আছে একটি নাটবোল্ট, না আছে একটি পিলার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ঝুলে রয়েছে কেবল একটি চাবির সাহায্যে। ব্রিটিশদের তৈরি করা হাওড়া ব্রিজ সম্পর্কে এই ১০ অবাক করা তথ্য। যা জানলে রীতিমত অবাক হতে বাধ্য হবেন আপনিও। হাওড়া ব্রিজ সম্পর্কে এই ১০ টি অবাক করা তথ্য যা ৯৯ শতাংশ বাঙালিই জানেন না, ভাবেন কী ভাবে এমনটাও সম্ভব। দেখুন, কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল
এক নির্দিষ্ট সময় এই রহস্যময় সেতুটি বন্ধ থাকে কেন ?
হাওড়া ব্রিজ চত্বর। আদি কলকাতার স্বাদ পেতে গেলে একবার না একবার এই এলাকায় আপনাকে আসতেই হবে। ব্রিজের উপরে উঠে গঙ্গার দৃশ্য ভোলার মতো নয়। হাওড়ার দিক থেকে হোক অথবা কলকাতার দিক থেকে হাওড়া ব্রিজকেও দেখতে অসাধারণ। ইংরেজ আমলে তৈরি হল এই ব্রিজটা ভারতের প্রতীক ৮০ বছর পেরিয়েও এটি দেশের অন্যতম পরিচিত একটি স্থাপত্য। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া এই দেশটি আজও একই রকম স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মা গঙ্গার বুকে। প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ এই ব্রিজে কত রহস্য রয়েছে সে সম্পর্কে ৭ অবাক করা তথ্য যা ৯৯ শতাংশ মানুষই জানেন না। ১) নাট বোল্ট ছাড়া হাওড়া ব্রিজ। হাওড়া ব্রিজের মতো সুবিশাল ব্রিজ তৈরিতে একটিও নাট বোল্ট লাগাতে হয়নি। মেটাল প্লেটগুলিকে এমনভাবে বসিয়ে চেপে
এক নির্দিষ্ট সময় এই রহস্যময় সেতুটি বন্ধ থাকে কেন ?
দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও নাট বোল্ট বা স্ক্রু ছাড়াই এত বড় ব্রিজ সফলভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ২) ব্রিজের অভিনবত্ব। ১৮৭৪ সালে প্রথম এই ব্রিজটা তৈরি করা হয়। তখন মানুষজনের যাতায়াত কম থাকায় দুর্বল কাঠের ব্রিজে কাজ চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এরপর যখন হাওড়া স্টেশন তৈরি হয় তখন মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার জন্য দুর্বল কাঠের ব্রিজ আর কাজ চলত না। তাই ১৯২২ সালে পাকাপাকিভাবে ২৬ হাজার ৫০০ টন স্টিল দিয়ে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু ইংরেজ আমলে এই ব্রিজটা তৈরি করা হয়েছিল, তাই ইংরেজ শাসকদের অর্ডার ছিল এই ব্রিজ যেরকম ভাবে তৈরি করা হোক না কেন এতে যেন কোনও পিলার না থাকে। যাতে করে গঙ্গাবক্ষে ভেসে যাওয়া কোনও নৌকা বা জাহাজ এই ব্রিজের তলা দিয়ে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারে। আর সেই জন্য এই ব্রিজের নীচে কোনও পিলার রাখা যাবে না। তাই ব্রিজটি শুরুতে এবং শেষে ৪
এক নির্দিষ্ট সময় এই রহস্যময় সেতুটি বন্ধ থাকে কেন ?
টি করে পিলার রয়েছে। কিন্তু এর মাঝে কোনও পিলার নেই। অর্থাৎ ৭০৫ মিটার লম্বা এই ব্রিজটি গঙ্গা নদীর উপর ঝুলন্ত অবস্থাতেই রয়েছে। ৩) ভারতে টাটার অবদান। ব্রিটিশ ভারতে কোনও কিছু তৈরি করতে হলে শুধু কাঁচামাল নয়, সমস্ত জিনিসই জাহাজে চাপিয়ে ভারতে আনা হত। তারপর এখানে এনে তা জুড়ে দেওয়া হতো। ব্রিজের সরঞ্জাম ইংল্যান্ড থেকে কলকাতা আসার কথা ছিল, সেজন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ হাজার টন স্টিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলায় সেই জাহাজ ঘুরিয়ে নেওয়া হয় মাত্র ৩ হাজার টন কাঁচামাল ইংল্যান্ড থেকে পৌঁছায় ভারতে। বাকী ২৩ হাজার টন কাঁচামাল বা স্টিল সরবরাহ করেছিল ভারতের টাটা স্টিল কোম্পানি। এমনকী, নতুন ব্রিজ তৈরির সময়ে স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যেই কাজ করা হয়েছিল। ৪) কিন্তু কেন প্রতিদিন রাত আর দুপুর ১২ টায় বন্ধ রাখা হয় এই ব্রিজ। শোনা যায়, এই ব্রিজ তৈরি করার সময় একজন ইঞ্জিনিয়ার নাকি বলেছিলেন এই ব্রিজ ঠিক ১২ টার সময় ভেঙে পড়বে। তবে রাত নাকি সকাল ১২ টা সে বিষয়ে কিছু
এক নির্দিষ্ট সময় এই রহস্যময় সেতুটি বন্ধ থাকে কেন ?
স্পষ্ট করে বলেননি। আর এই বিষয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও প্রথম থেকেই সকাল ১২ টা আর রাত ১২ টায় ব্রিজটি ৩ থেকে ৪ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়। যদিও ইতিমধ্যেই ব্রিজে মরচে ধরতে শুরু করেছে। যার প্রধান কারণ পানের পিক আর পশুপাখির মলমূত্র। তবে এই বৃদ্ধি প্রতি বছর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাহলে খরচ পড়বে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। ৫) পুরনো ব্রিজ। নতুন ব্রিজটির বয়স সাত দশকের বেশি হয়ে গেলেও এটিকে নতুন হাওড়া ব্রিজ বলে ডাকা হয়। তার কারণ এই জায়গায় আগে আরও একটি ব্রিজ ছিল, যার নাম পুন্টুন ব্রিজ। সেটি তৈরি হয়েছিল ১৮৭৪ সালে আর সেই ব্রিজের সীমিত ধারণ ক্ষমতা ছিল। ৬) নতুন হাওড়া ব্রিজ। কলকাতা, সুতানুটি এবং গোবিন্দপুর নিয়ে তৈরি হওয়া কলকাতা তখন ঝড়ের গতি কলেবর বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে হাওড়া কমার্শিয়াল হাব দুটি গঙ্গাপাড়ের এলাকাকে জুড়ে দেওয়ার আশু প্রয়োজন ছিল। ১৯০৬ সালে হাওড়া স্টেশন তৈরি হওয়ার পরে সে চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তাই নতুন ব্রিজ তৈরির জন্য পরিকল্পনা শুরু হয় তখন থেকেই। ৭) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা। ১৯০০ থেকে শেষদিকে পুরনো পুন্টুন ব্রিজ শরীর নতুন ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব সামনে আসে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে তা থেমে যায়। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে পুরনো
এক নির্দিষ্ট সময় এই রহস্যময় সেতুটি বন্ধ থাকে কেন ?
পুন্টুন ব্রিজ সারাই হয়। শেষপর্যন্ত ১৯৪৩ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজ এর পথ চলা শুরু। বিশ্বযুদ্ধের কারণে বারবার থমকে গিয়েছে এই ব্রিজ তৈরির কাজ। ৮) কোনও উদ্বোধন হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝেই ১৯৪২ সালে হাওড়া ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল এবং ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিজটি জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি সারা বিশ্বের সামনে গোপন রাখা হয়েছিল৷ কারণ সেসময় জাপান পার্ল হারবারে বোমা ফেলেছিল। আর সেই সময়ই ব্রিজের কথা জাপান জানলে এটিও টার্গেট হতে পারত। সেই কারণেই সেই কথা ভেবেই ঘটা করে উদ্বোধন না করে ব্রিজটি খুলে দেওয়া হয়। ৯) ট্রাম চলাচল । হাওড়া ব্রিজে প্রতিদিন লাখো লোক হেঁটে অথবা গাড়িতে বাসে যাতায়াত করেন। তবে ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর প্রথম যুগে কলকাতা ও হাওড়ার দুদিক থেকেই লোককে পার করার জন্য ট্রাম ব্রিজের উপরে চলাচল করত। বস্তুত প্রথম যে গাড়িটি ব্রিজে চলেছিল সেটি ট্রামই। তবে বাড়তে থাকা ট্রাফিকের চাপে ১৯৯৩ সালে ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০) হাওড়া ব্রিজের রেকর্ড। যখন তৈরি হয় তখন এটি বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম ব্রিজ ছিল। বর্তমানে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম কান্টিলিভার ব্রিজ । দৈর্ঘ্যে ব্রিজটি ৭০৫ মিটার লম্বা এবং চওড়ায় ৭১ ফুট। সঙ্গে পথচারীদের জন্য ১৪ ফুট লম্বা ফুটপাত রয়েছে দুদিকেই।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট ।