তিরুপতি বালাজি মন্দিরে প্রতিদিনই হাজার হাজার টন চুল দান করেন মহিলারা। জানেন কি হয় এত বিপুল পরিমাণ কেশরাশি দিয়ে? মন্দিরে জমা পড়া এত চুল দিয়ে কী হয় জানলে হয়তো আপনিও অবাক হবেন। মেয়েদের মাথার চুল দিয়ে কী হয় জানেন? জানুন দেশের সবচেয়ে ধনী মন্দির হল তিরুপতি বালাজি। এই তিরুপতি মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্যময় অজানা কাহিনী। তিরুপতি মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা। সেই চুল দিয়ে কী হয় জানেন? প্রতিদিন
মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা ! রহস্যময় মন্দিরটির নাম কী ?
হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় জমান তিরুপতি সহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেন। ইচ্ছে পূরণ হলে চুল কাটিয়ে দান করেন ভক্তরা। আর এই চুল বিক্রি করেই বছরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে মন্দির কর্তৃপক্ষ। কারা কিনেন এই চুল? কীভাবে চলে বেচাকেনা? দেশে তিরুপতি মন্দিরে ভক্তরা সব থেকে বেশি চুল দান করেন। বলা হয়, এই মন্দিরে ভক্তরা যত চুল দেন ঈশ্বর তার ১০ গুণ বেশি সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন তাকে। কথিত রয়েছে তিরুপতি মন্দিরে চুল দিয়ে সন্তুষ্ট হন লক্ষ্মী দেবী। তাই এখানে শুধু পুরুষ নন মহিলারাও ইচ্ছা পূরণের জন্য চুল দান করে থাকেন। চুল দান নিয়ে অন্য একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। বলা হয় অতীতে বালাজির মূর্তির ওপর পিঁপড়ের পাহাড় তৈরি হয়েছিল। একটি গরু রোজ এসে ওই পিঁপড়ের পাহাড়ে দুধ দিত । একদিন দেখতে পেয়ে
মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা ! রহস্যময় মন্দিরটির নাম কী ?
খুব রেগে যান গরুর মালিক। কুঠার দিয়ে গরুর মাথায় আঘাত করেন, সেই আঘাত লাগে বালাজির মাথায়। রক্তক্ষরণ শুরু হয় আঘাতে। বালাজির মাথার চুল ঝরে পড়ে, তা দেখে নীলা দেবী নিজের চুল কেটে সেই ক্ষতের উপর জড়িয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বালাজির আঘাত সেরেও যায়। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে রয়েছে নীলা দেবীর মূর্তি। নীলাদেবীর এই পদক্ষেপে নারায়ণ খুশি হন। জানান মহিলাদের শরীরের সৌন্দর্য্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল চুল, সেই চুলই তার জন্য কেটে ফেলেছেন নীলাদেবী । মনে করা হয় সেই কারণেই তিরুপতি মন্দিরে চুল দিলে ইচ্ছা পূরণ হয়। তিরুপতিতে প্রত্যেক ভক্তের মাথা কামানোর জন্য নাপিতেরা পান ১১ টাকা করে মাসে। তাদের মেরেকেটে রোজগার ৮ হাজার টাকা। ভক্তরা খুশি হয়ে অনেক সময় তাঁদের অতিরিক্ত টাকাও দিয়ে থাকে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯০০ কেজি চুল বিক্রি করেছিলেন। অনলাইনে সেই চুল নিলাম করে পেয়েছিলেন ১১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় করে তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ।
মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা ! রহস্যময় মন্দিরটির নাম কী ?
এছাড়াও মেয়েদের মাথার চুল বিক্রি হলেও সেটা কি কাজে ব্যবহৃত হয় জানুন। ১) মাথার চুলে ব্যবহার প্রথমেই মাথায় আসে, সেটা হল পরচুলা বা উইগ বানানো। চুল ঝরা সমস্যার সাথে লড়াই করতে পরচুলার ব্যবহার অনস্বীকার্য। ২) কসমেটিক্স বা মেকআপ শিল্পেও এই চুল প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন প্রোডাক্ট তৈরি হওয়ার পরে তার টেস্টিং করার জন্য সত্যিকারের চুলের দরকার হয়ে পড়ে। একশ গ্রাম চুলের দাম গুণমান অনুযায়ী ২ হাজার থেকে ১০ হাজারের বেশি পর্যন্ত হতে পারে। ৩) স্মার্ট গ্রো নামের ১ টি কোম্পানি গার্ডেনিং প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য ভারত এবং চীন থেকে মানুষের চুল আমদানি করে। চুল দিয়ে বিনুনি করে এক জাতীয় ম্যাট তৈরি করা হয় এবং যেটা গাছের মূলকে পোকার হাত থেকে রক্ষা করে। ৪) প্রায় দুই দশক আগে থেকে নাসা এবং কয়েকটি সংস্থা মানুষের চুল নিয়ে গবেষণা করছে। ৫) ড্রেস ডিজাইনকারী রা নতুন ড্রেস ডিজাইন করার জন্য চুল নিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। এটি একদমই আশ্চর্যের ব্যাপার। চুলের গঠনমূলক উপাদান হল কেরাটিন প্রোটিন, বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেই
মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা ! রহস্যময় মন্দিরটির নাম কী ?
প্রোটিন থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিষয়টি ভাল চোখে দেখেননি। এছাড়াও মেকাপ ব্রাশ, কৃত্রিম আইল্যাশ ব্রাশ ইত্যাদি তৈরি করতে মানুষের মাথার চুল ব্যবহার করা হতে পারে। এর মধ্যে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা। দূর হচ্ছে বেকারত্বের অভিশাপ। স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক মানুষ মানুষের মাথার পরিত্যক্ত চুল। মানুষের মাথার পরিত্যক্ত চুল এখন একরকম বিশেষ ধরনের রপ্তানি যোগ্য পণ্য। প্রতিদিন বিভিন্ন পত্র পত্রিকার খবর পড়েও জানা যায় এই ফেলে দেওয়া চুল ব্যবসার খবরাখবর আবার স্বচক্ষে দেখা যায়। শহরের অলিগলিতে ফেলে দেওয়া চুল সংগ্রহ করে ফেরিওয়ালাদের। পরিতক্ত চুলকে ঘিরে দেশে গড়ে উঠেছে কয়েকশো শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের মতোই অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। চুল ব্যবসায় জড়িত থেকে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত চুলের মূল্য ১৫ থেকে কুড়ি হাজার। সেজন্য আগেকার পরিত্যক্ত এই চুল এখনকার দিনে আর ফেলনা বস্তু নয়। পরিত্যক্ত চুল যাচাইয়ের পর চলে যায় চিন, কোরিয়া, মায়ানমার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । ওই সব দেশের ক্রেতারা দেশ থেকে বৈধ পথে এ
মন্দিরে চুল দান করেন মহিলারা ! রহস্যময় মন্দিরটির নাম কী ?
সব চুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, বিদেশে সব চুল দিয়ে বিভিন্ন রকম ক্যাপ, পরচুলা ও টাক মাথায় হেয়ার প্ল্যান্টেশন সহ আরও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এই পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দিন দিন স্বাবলম্বী হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে, কর্ম সংস্থানও বাড়ছে।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট নিউজ ।