ছেলেটা বড় হয়েছে অনাথ আশ্রমে। পেটের তাগিদে হোটেলের বাথরুম অবধি পরিষ্কার করেছে সে। আর আজ সেই ছেলেটাই ভারতের অন্যতম সফল আইএএস অফিসার। বি আব্দুল নাসারের ছোট বেলায় বাবা মারা গিয়েছিলেন। আব্দুলের হত দরিদ্র সংসারে আবদুলরা ছিলেন ছয় ভাই বোন। আব্দুলের মা মানজুম্মা দেবী খুব ভোরে উঠে লোকের বাড়িতে কাজে বেরিয়ে যেতেন। তারপর রাতে বাড়ি ফিরে উনুন ধরিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়তে বসাতেন। কিন্ত বাবা মারা যাওয়ার পর ভর পেট খাওয়া জুটতো না তাদের। মা বেরিয়ে যাওয়ার পর সারাদিন অনাথের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন আব্দুল এবং তাঁর ভাইবোনেরা। কিন্ত বাকী ভাই বোনদের মধ্যে আব্দুলই ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী। তাই তাকে মানুষ করার তাগিদে অনাথ আশ্রমেই রেখে এসেছিলেন তাঁর মা কিন্ত আব্দুল গরীব হয়ে বেঁচে থাকতে চাননি তাই নিজের ভাগ্য নিজেই বদলে আজ গোটা দেশের মানুষের
হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে নাসার আজ প্রশাসনিক আধিকারিক ! খুশির জোয়ার এলাকা জুড়ে।
কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার আরেক নাম। আসুন আজ আপনাদের এক লড়াকু যোদ্ধার গল্প বলি যে মানুষটার জীবন যুদ্ধের গল্প শুনলে আপনি ও অনুপ্রাণিত হতে বাধ্য হবেন, কেরালার কেন্নূড়ে বড় হয়েছেন আব্দুল নাসার মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর গোটা সংসার কে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন আব্দুলের মা। সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ও হিমসিম খেতে হতো তাঁকে। আব্দুলের যখন দশ বছর বয়স, সেই সময়ই আব্দুল পড়াশুনার পাশাপাশি একটি হোটেলের বাথরুম পরিষ্কারের কাজ করতেন। নিজের মেধাবী সন্তান কে এভাবে দেখে বাথরুম পরিস্কার করতে দেখে বুকটা ফেটে যেতো আব্দুলের মায়ের। আসলে আব্দুল কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন মানজুম্মা দেবী। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আব্দুল যদি পড়াশুনা করার সুযোগ পায় তাহলে সে অনেক দূর যাবে। কিন্ত আব্দুল কে বাড়িতে তাঁর কাছে রেখে দেন। তাহলে এই অভাবের সংসারে আব্দুল কে তিনি কখনও মানুষ করতে পারবেন না। তাই আবদুল কে কোন অনাথ আশ্রমে রেখে এলে সেখানে অন্তত দুবেলা ভর পেট খেতে পারবে আর পড়াশুনা টাও করতে পারবে। তাই এক আত্মীয়ের পরামর্শে থালাসেরিযা এক অনাথ আশ্রমে আব্দুল কে রেখে এসেছিলেন তাঁর মা। এই
হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে নাসার আজ প্রশাসনিক আধিকারিক ! খুশির জোয়ার এলাকা জুড়ে।
অনাথ আশ্রমে জীবনের বারোটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আব্দুল। অনাথ আশ্রমে বড় হতে হতে আব্দুল খবর পেয়েছেন তাঁর দাদা দিনমজুরের কাজ করছে। তাঁর চার বোন মাকে সাহায্য করার জন্য বিড়ি বাঁধার কাজ করছে। আব্দুলের মা যখন অনাথ আশ্রমে আব্দুলের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন তখন মায়ের উপর খুব অভিমান হতো ছেলের কিন্ত আব্দুলের মা ছেলেকে সব সময় বলতেন তোমায় অনেক বড় হতে হবে কারণ আমাদের জীবন তোমার হাতে। একবার অনাথ আশ্রমে এক আইএএস অফিসার এসেছিলেন। তাঁকে দেখেই আইএএস হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন আব্দুল কিন্ত আশ্রমে থাকতে থাকতে ও সংসারের অভাবের কথা শুনে দুবার পালিয়ে গিয়ে কাজে ঢুকে গেছিলেন আব্দুল। পড়াশুনার পাশাপাশি এসটিডি বোর্ডে ও পার্ট টাইম কাজ করতে শুরু করেছিলেন আব্দুল। সকালে খবরের কাগজ দিতেন। কিন্ত মা মানজুম্মা দেবী ছিলেন নাছর বান্দা। ছেলেকে কখনও পড়াশুনা ছাড়তে দেন নি তিনি। আর এভাবেই ১৯৯৫ সালে ইংরেজিতে মাস্টার্স করে ফেলেছিলেন আব্দুল। আর তারপর কঠোর পরিশ্রম করে কেরল সরকারের জুনিয়র হেলথ ইন্সপেক্টর পদে চাকরি ও পেয়েছিলেন তিনি। এর পর অবশ্যই আব্দুলের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জেদ আরও বেড়ে যায়। আব্দুল চাকরি করতে করতেই ডেপুটি কালেক্টর পদের জন্য পরীক্ষায় বসেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ডেপুটি কালেক্টরের চাকরিটাও পেয়ে গেছিলেন তিনি।২০০৬ সালে ডেপুটি কালেক্টর হয়ে গেছিলেন তিনি। ডেপুটি কালেক্টর হওয়ার পর এগারো বছর পর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তাঁকে আইএএস অফিসারের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। আব্দুল নাসার আজ কল্যাণ জেলার কালেক্টর সাহেব যার কর্মদক্ষতা কে কুর্নিশ জানিয়েছে
হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে নাসার আজ প্রশাসনিক আধিকারিক ! খুশির জোয়ার এলাকা জুড়ে।
খোদ কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলো ছেলের এই সাফল্য দেখে যেতে পারেন নি আব্দুলের মা। আজ স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার আব্দুলের। বোনদের বিয়ে দিয়েছেন দাদাকে দোকান করে দিয়েছেন কিন্ত তিনি আজ ও ভুলেন নি তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় গুলো । তাই মাঝে মধ্যে আব্দুল কে দেখতে পাওয়া যায় সেই অনাথ আশ্রমে। আসলে কী জানেন খারাপ সময় ত আসবে কিন্ত আপনি যদি আপনার লড়াইটা জারী রাখেন তাহলে কোন বাঁধাই আপনার সামনে দাড়াতে পারবে না।ন্যাশনাল ডেস্ক রিপোর্ট ।